ঈদকে সামনে রেখে কিশোরী-তরুণীদের পছন্দের তালিকায় যোগ হয়েছে লম্বা কামিজের সঙ্গে প্লাজো, ফ্লোর টাচ্ কামিজ, সেমি ফ্লোর টাচ, কয়েক লেয়ারে বড় ঘেরের ফ্রক তার সঙ্গে প্লাজো অথবা লেগিংস। এই সময়ে মেয়েদের পোশাকের ট্রেন্ডটা এমনই, জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোহরা আরেফিন। জোহরা বলেন, যারা শুধু সালোয়ার কামিজ পরে তাদের জন্য সিম্পল কামিজ চলছে। সঙ্গে আছে বাহারি কুর্তি। তার সঙ্গে আসা শিরিন সুলতানা জানান, এবার মেয়েদের সালোয়ার কামিজের দাম খুব একটা বাড়েনি।
ঈদ যতই এগিয়ে আসছে পোশাকের দোকানগুলোতে ততই ভিড় বাড়ছে। এখন তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে মাঝরাত অবধি ভিড় দেখা যাচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। তারা বলেন, এরই মধ্যে মেয়েদের জন্য বাজারে এসেছে বাহারি ডিজাইনের পোশাক। গত কয়েক বছরের ন্যায় এবছরও বেশ বড় কামিজের চাহিদা আছে বলে জানান বিক্রেতারা। সঙ্গে আছে টিনএজ মেয়েদের জন্য কুর্তি।
‘রঙ বাংলাদেশে’র প্রধান ডিজাইনার ফয়সাল আহমেদ জানান, এখনকার মেয়েদের পোশাকের ডিজাইন নিয়ে। তার মতে, এবার গাঢ় রংয়ের পাশাপাশি সব রকমের হাল্কা শেডকেও প্রাধান্য দিচ্ছে ক্রেতারা। কারণ সময়টা এখন গরম আবার বৃষ্টির। লাল থেকে শুরু করে নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি, কমলা, মেজেন্টাসহ থাকছে সবকটি রঙেই হাল্কা ব্যবহার। একরঙা পোশাকের ফ্যাশন বদলে একই পোশাকে কয়েক রঙের ব্যবহার করছেন তারা। আবার কখনো দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত রঙের কাজ বা কন্ট্রাস্ট রঙের ব্যবহার। কামিজের কাজের সঙ্গে রং মিলিয়ে করা হয়েছে সালোয়ার এবং ওড়নার ডিজাইন। ফয়সাল জানান, তারা দেশীয় কাপড়কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। সুতি, তাঁত, দেশীয় লিলেন যেমন থাকছে তেমন থাকছে এন্ডি কটন, হাফ সিল্ক, সিল্ক, মসলিন।
তবে রেগুলার ডিজাইনের পোশাকেই সকলের আকর্ষণ বেশি বলে জানান কে ক্র্যাফ্ট শাখা ব্যবস্থাপক নাসির হোসেন। তিনি জানান, এই পোশাকে সুতিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে কে ক্র্যাফট। ডিজাইনার ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাটিংয়ের ক্ষেত্রে কামিজের ঝুলে কখনো তেরছা কখনো বেশি ঘের দেখা যাবে। হাতার ক্ষেত্রে থ্রি কোয়ার্টার ও ফুলস্লিভ কিংবা স্লিভলেসও চলছে ভালো। সাধারণত কম বয়সের মেয়েরা বেশি স্লিভলেস পরছে বলে জানান রঙের ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, বেশি পালাজ্জো ও লেগিংসের চাহিদা এবার বেশি। আবার চাপা ডিজাইনের সালোয়ারের পাশাপাশি চুড়িদার ও প্যান্ট কাটিং পায়জামার নিচে চওড়া বর্ডার দিয়ে পায়ের কাছে বড় সাদা পুঁতি ব্যবহার করছে মেয়েরা।
পোশাক ডিজাইনে ঈদকে সামনে রেখে ভাবা হয়েছে ঋতু পরিবর্তনের কথাও। এ জন্যই এবারের ঈদের সালোয়ার-কামিজ তৈরি করা হয়েছে। এসব কামিজে থাকছে বক, কারচুপি, অ্যাপিক, ভরাট অ্যাপিক ও এমব্রয়ডারির কাজ। ঈদ উপলক্ষে সালোয়ার-কামিজে জমকালো ভাব আনতে কামিজের কাজগুলো ভারী রাখা হচ্ছে। গলায় উজ্জ্বল রংয়ের সুতার কাজ থাকছে। কোনো কামিজের সম্পূর্ণ বডিতে আবার কোনোটির নিচের অংশে সুতার মোটা ও ভরাট ডিজাইন, পট্টি ও লেস ব্যবহার করা হয়েছে। বাদ যাচ্ছে না পেছনের অংশও। কামিজের সামনের সঙ্গে মিলিয়ে পিছনের অংশেও কাজ করা হচ্ছে। কামিজের হাতায়ও থাকছে ভারী কাজ। সালোয়ার হচ্ছে কামিজের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট করে কাজের ডিজাইন। ওড়নায় থাকছে হালকা কাজ। লম্বা কাটিংয়ের কামিজের পাশাপাশি রয়েছে মাঝারি কাটিংয়ের কামিজগুলোও। একছাঁটের এই কামিজগুলো হচ্ছে কিছুটা ঢিলেঢালা বা লুজ ফিটিংয়ের। কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তা বেশি থ্রি-কোয়ার্টার হাতার। এবারও চলছে থ্রিকোয়ার্টার হাতার কামিজ। তবে ডিজাইন ও পছন্দ ভেদে থাকছে ফুল ও স্লিভলেস হাতাও। ফ্যাশনের পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি ফ্যাশন হাউসই কামিজের কাটিং প্যাটার্নে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। আর এই পরিবর্তনের ব্যাপকতা চোখে পড়ার মতো। কামিজের কাটিং, কলার, লে-আউট, ছাপা, বক, বুটিক, বাটিক, লেস ও চুমকির ব্যবহার প্রায় সবকিছুতে দুই-এক বছরের আগের ডিজাইন থাকলেও এই ঈদ উপলক্ষে থাকছে কিছু নতুনের ছোঁয়া।